‘শান্ত দিদা আমরা এসে গেছি’ অন্তস্থল থেকে চিৎকারটা গলার কাছে এসেও বন্ধ জানলাটার দিকে তাকিয়ে আটকে গেল, ৪০ বছর আগে মায়ের সঙ্গে রিক্সা করে এই পুরনো দিনের বাড়ীটার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঠিক এমনি করেই চিৎকার করে আমাদের আগমন জানান দিতাম, আর প্রত্যুত্তরে ছোট্ট খোলা জানলা দিয়ে শান্ত দিদার গলা শুনতে পেতাম, কি উত্তর পেতাম তা আজ আর মনে নেই। সেই জানলাটা আজ বন্ধ, শান্ত দিদাও অনেকদিন গত হয়েছেন কিন্তু আজ শান্ত দিদার কণ্ঠে সেই প্রত্যুত্তর শোনার জন্য মনটা বড় ব্যকুল হয়ে উঠেছিল। বহু বছর পরে সেই বাড়ীটার সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে ছোটবেলার সেই খুশির মুহূর্তের ঝলক আমায় আরো একবার ছুঁয়ে গেল, আর একটু হলে চিৎকারটা বেরিয়েই যাচ্ছিল। অথচ আজ এখানে আসার কোন কথাই ছিলনা, রথের দিন বাড়ী থেকে বেরিয়েছিলাম বীরনগরের রথ দেখতে যাবো বলে আর নেমে পড়লাম রানাঘাট, ষ্টেশন থেকে টোটো করে এখানে। আনুলিয়া হাসপাতালের সামনেটা এখন দোকান বাজারে একদম জমজমাট, আগে যখন আসতাম একেবারে ফাঁকা ছিল, রাস্তা থেকেই স্টেডিয়াম শিলান্যাসের ফলকটা দেখা যেত, আর হাসপাতাল পার হয়ে সেই শকুন বসে থাকা বটগাছটা আজও আছে কিন্তু শকুনগুলো সব উধাও, আমার ছোটবেলায় আগাগোড়া খোয়া ওঠা এই রাস্তার গাছতলার শকুনের বিষ্ঠায় সাদা হয়ে যাওয়া পথ তাড়াতাড়ি পার হতাম পাছে গায়ে শকুনের বিষ্ঠা পড়ে। হাসপাতাল এলাকাটা পার করেই মাস্কটা খুলে নিলাম, গন্ধ নিতে হবে যে আমার আনুলিয়ার গন্ধ, আমার ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতি মাখা মিষ্টি গন্ধ। আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে টোটো ছেড়ে দিয়ে বাকি বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে এলাম, উদ্দেশ্য কোন কিছু যেন দেখায় বাদ না পড়ে যায়।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *